নিজস্ব প্রতিনিধ :-চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় চোরাই তেলের রমরমা বাণিজ্য চলছে। সিটি করপোরেশনের গাড়ির পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে প্রকাশ্যে চুরি হচ্ছে তেল। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের তেলের ভাউচার (ট্যাংক লরি) থেকেও দেদারছে তেল চুরি হচ্ছে। আর প্রকাশ্যে এসব চোরাই তেলের কারবার চললেও এ যেন দেখার কেউ নেই। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় রয়েছে ৯টি চোরাই তেলের দোকান। ৯টি চোরাই তেলের দোকান সরকারী জায়গার উপরে খোলা আকাশের নিচে। এসব দোকানে নেই কোনো সাইনবোর্ড। নেই বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদনসহ বিভিন্ন লাইসেন্সও। সিটি করপোরেশনের (চসিক) আবর্জনার ডিপোকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে এসব ভাসমান তেলের দোকান। চসিক সহ সরকারি ও বেসরকারি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে চুরি করা তেল কিনতে বসানো হয়েছে এসব দোকান। রাতেও চলে বায়েজিদে চোরাই তেলের বড় কারবার। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ক্যান পাবলিক মোড়ের বিপরীত পাশে খোলা আকাশের নিচে সোহেলের চোরাই তেলের দোকান। সেই দোকানে দৈনিক তিন হাজার লিটার ডিজেল নামানো হয়। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট গেটের উত্তর পাশে মোড়ে রয়েছে চোরাই তেলের দোকান। সেখানে দৈনিক দুই হাজার লিটার ডিজেল নামানো হয়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভাউচারের মাধ্যমে আসে এ তেল। প্রকাশ্যে এ কাজ করলেও চোরদের ধরার কেউ নেই। শেরশাহ মোড়ের পশ্চিম পাশে কালামের দোকান। বায়েজিদ লিংক রোডে রয়েছে মহিন উদ্দিনের কারবার। এখন দেখাশোনা করেন তার ছেলে সাবিক। সহযোগী হিসেবে আছেন সেলিম। আর একটু পশ্চিম দিকে আছে আবদুর রহিমদের তেলের দোকান। সিটি করপোরেশনের ময়লার ডিপোর সামনে আবদুল মজিদ ও বক্করের দোকান। তাদের বিপরীত দিকে গাফফার ও নওশাদের দোকান। সব মিলিয়ে ৯ জনের সিন্ডিকেট বায়েজিদে চোরাই তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। যেকোনো সংস্থাকে তারা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে এসব দোকান গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, বায়েজিদ বোস্তামী থানার আওতাধীন রিং রোডে চসিকের বৃহৎ ময়লার ডিপো অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে কয়েক শ ট্রাক ময়লা সংগ্রহ করে ডিপোতে নিয়ে যায়। রাতে গাড়িগুলো চলাচল করে। মূলত এসব গাড়ি থেকে তেল চুরির কারবার হয়ে থাকে। তাই ময়লার ডিপোকে কেন্দ্র করে বায়েজিদ এলাকায় এ কারবার গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া বায়েজিদ শিল্প এলাকার বিএসআরএসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভারী যানগুলো থেকে জ্বালানি তেল চুরি হয়। গাড়ির ড্রাইভাররা নিয়মিত তেল বিক্রি করে দেন। সরেজমিনে দেখা যায়, বায়েজিদ আরেফিন নগরের ময়লার ডিপো থেকে বের হওয়ার সড়কে বাম পাশে একটি কাভার্ড ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ট-১১-৫৫৬৬। এ গাড়ি থেকে পাইপ লাগিয়ে নামানো হলো প্রায় ২৫ লিটারের মতো ডিজেল। ওই তেলের বিনিময়ে কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার দোকানের মালিক নওশাদের কাছ থেকে নিলেন দুই হাজার টাকা। নওশাদ প্রতিনিধিকে বলেন, একই সময় ক্যান পাবলিক মোড় এর বিপরীত পাশে সোহেলের তেলের দোকানের সামনে আরো একটি গাড়ী দাড়িয়ে এক হাজার লিটার তেল নামানো হয় গাড়ীটির নাম্বার (১১-৫৯৭৪) চোরাই তেল ব্যবসায়ী সোহেল জানান ‘পুলিশ থেকে শুরু করে সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করি আমরা। সবাইকে ম্যানেজের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।’ তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে বলেন, ‘চোর হলো গাড়ির ড্রাইভাররা। আমরা তো তেল কম দামে কিনে আবার ন্যায্য দামে বিক্রি করি।’ তিনি জানান, দৈনিক এক হাজার লিটার তেলের ব্যবসা হয় তার। এ পরিমাণ তেল বিভিন্ন গাড়ি থেকে কেনেন তিনি। অন্যদিকে বায়েজিদ ক্যান্টনমেন্ট প্রধান গেটের উত্তর পাশের মোড়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েলের একটি ভাউচারকে (লরি) দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সামনে গেলে চোখে পড়ে গাড়ির সঙ্গে পাইপ লাগিয়ে নামানো হচ্ছে তেল। ভিডিও করা শুরু করলে ড্রাইভার মুখে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু চোরেরা প্রকাশ্যে তেল ড্রামে নিয়ে চলে গেলেন। এখানে চলে শহিদের চোরাই তেলের কারবার। তিনি দৈনিক দুই হাজার লিটার তেল ক্রয় করেন। মেঘনার এ ভাউচারের নম্বর চট্ট মেট্রো ট ০১-০৩৫২। এর ড্রাইভার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু তেল জমা থাকে। তা আমরা বাইরে বিক্রি করে দিই। এ তেল বিক্রি করা টাকায় আমাদের দৈনিক পকেট খরচ চলে। এখানকার চোরাই তেলের কারবারি মোহাম্মদ শহিদ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘সাংবাদিকরা লিখলেও কোনো কাজ হবে না। দেশব্যাপী চলে চোরাই তেলের ব্যবসা। আমিও করি। পুলিশসহ সবাইকে মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা চালাই। সুতরাং আমাদের ধরার জন্য কে আসবে।’ বায়েজিদ থেকে লিংক রোডে প্রবেশের পর মোড়ে মহিন উদ্দিনের দোকান। তার ছেলে সাকিব বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো লাইসেন্স নেই। এখন সবাই ব্যবসা করছেন। আমরাও করছি। এখানে লাইসেন্সের দরকার কী। মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দোকান চালাতে সবাই টাকা দেন, আমাকেও দিতে হয়। টাকা না দিলে কি ব্যবসা করতে দেবে? এখানে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা করছেন অনেকে। টাকা সবাইকে দিতে হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) প্রতিনিধিকে বলেন, বায়েজিদ এলাকায় চোরাই তেলের ব্যবসার কথা আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’