নিজস্ব প্রতিনিধ :- — হালিশহর থানায় মোটা অংকের টাকা দিলেই ব্যবসা হবে বৈধ। হালিশহর থানাকে প্রতি মাসে লাইন ক্লিয়ারের নামে টাকা দিতে হয়, অন্যথায় লাইন বন্ধ বলে জানান থানা থেকে। চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, যাদের পেছনে রয়েছে হালিশহর থানা পুলিশের সরাসরী সহযোগীতা ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহায়তা। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঠ বোঝাই গাড়ি অবৈধভাবে প্রবেশ করছে হালিশহরের বেপারী পাড়ায় , হালিশহর থানা পুলিশ কে প্রতি দিন প্রতি গাড়ী বাবাদ টাকার বিনিময়ে ‘লাইন ক্লিয়ার’ নিয়ে চলছে এই পাচার কার্যক্রম। বিভিন্ন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল—বিশেষত কক্সবাজার,রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, বোয়ালখালী, বাঁশখালী উপজেলা, পার্বত্য চট্টগ্রামের কাউখালী, কাপ্তাই, বরকল, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, রোয়াংছড়ি, লামা, মানিকছড়ি, দীঘিনালা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু ও ফটিকছড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অবৈধভাবে সংগ্রহ করা কাঠ গোপনে নগরীতে আনা হচ্ছে এবং এখান থেকে দেশের অন্যান্য জেলায় পাচার করা হচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, একটি কাঠ বোঝাই গাড়ি নির্বিঘ্নে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশ করতে হলে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের গাড়ি প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম মহানগরের প্রবেশপথে বিভিন্ন থানার অধীনে থাকা চেকপোস্টেও দিতে হয় মাসোহারা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঠ পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বলেন, রাঙামাটি ও কাপ্তাই হয়ে নগরীতে কাঠ পৌঁছাতে তাদের ১১টি স্থানে টাকা দিতে হয়। সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এই পাচার সিন্ডিকেট থেকে মাসোহারা হিসেবে একটি বড় অংকের টাকা চলে যায় হালিশহর থানার কর্মকর্তাদের হাতে, যার পরিমাণ লক্ষ টাকার উপরে, এই অর্থের বিনিময়ে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না থানা পুলিশ বরং অনেক সময় সহযোগিতাও করা হয়। সিন্ডিকেটের প্রধান ঘাঁটি হালিশহর বেপারী পাড়ায়। এই এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য কাঠের গাড়ি আসে, যার কোনোটিরই নেই বৈধ পরিবহন অনুমতি কিংবা কাঠ সংগ্রহের অনুমোদন। বন বিভাগ এবং পুলিশের এই দুর্নীতির জাল ছাড়াও, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলও এই চক্রের পেছনে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ কাঠে পাচার সিন্ডিকেটের প্রধান মোহাম্মদ দিদারকে এই কাঠ কোথা থেকে সংগ্রহ করেন প্রশ্ন করলে, জবাবে তিনি বলেন যেখানে কাঠ বিক্রি করে সেখান থেকে আনি, এ বিষয়ে আপনার সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না বলে ফোন কেটে দেন এবং তারপর আর ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান পুরো ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমাদের এদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসেনা, আমরা হালিশহর থানা পুলিশ এর আগে বন বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি এবং প্রয়োজনে আবার অভিযান করব বন বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর সহকারী বন রক্ষক জয়নাল আবেদীন এই বিষয়ে বলেন, যদি অবৈধ ভাবে কাঠ সংগ্রহ করে এবং অবৈধ কিছু করে, তাহলে শুধু বন বিভাগ নয় প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। তার ভাষ্য মতে হালিশহরের থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। চট্টগ্রামে পরিবেশ রক্ষায় বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং কাঠ চোরাকারবারিদের হাতে পরিবেশ পড়বে মারাত্মক হুমকির মুখে।