মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মেগাপ্রজেক্ট, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’-এর বিস্তারিত জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় কয়েক বিলিয়ন ডলার এবং এটি মহাকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অস্ত্রব্যবস্থা হতে চলেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে গোল্ডেন ডোমের একটি নির্মাণকৌশল ঠিক করেছে। এর সঙ্গে এখনকার স্থলভিত্তিক মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করা হবে।
পুরো ব্যবস্থাটি হাইপারসনিক, ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারবে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কার্যকর হবে বলে তিনি জানান।
গোল্ডেন ডোম একটি স্থল এবং মহাকাশভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি উড়তে থাকা অবস্থায় কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে একাধিক পর্যায়ে শনাক্ত, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং থামিয়ে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরো ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে ডিজাইন করা হচ্ছে।
ব্যবস্থাটির উদ্দেশ্য হবে আকাশে ওড়ার আগেই কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করা, অথবা মাঝ আকাশে তা আটকে দেওয়া। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সাংবাদিকদের বলেন, গোল্ডেন ডোম হল কয়েক স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তাই ছুটে আসা ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি স্থর ভেদ করে গেলেও তা পরের পর্যায়ে ঠেকানো যাবে।
এমন মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের কত খরচ হবে? কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী তা ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, গোল্ডেন ডোমের জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। বর্তমানে কংগ্রেসে থাকা তার ট্যাক্স বিলে এটি গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, প্রকল্পের খরচের একটি বড় অংশ কৃত্রিম উপগ্রহ এবং ইন্টারসেপ্টরের পেছনে ব্যয় হবে।
ট্রাম্প জানান, গোল্ডেন ডোম তৈরি করতে প্রায় তিন বছর লাগবে। তবে, একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্পের খরচ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহন করা হবে। ওই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেবেন স্পেস ফোর্স জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন। বিমান বাহিনীতে ৩০ বছরের কর্মজীবনের পর তিনি ২০২১ সালে মহাকাশ বাহিনীতে যোগ দেন। এই চার তারকাধারী জেনারেল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ ব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞ।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে চীন ও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। গুয়েটলিন বলেন, সশস্ত্র বাহিনী প্রতি বছর প্রচুর হুমকি তৈরি হতে দেখছে। মার্কিন সিনেটরদের উদ্দেশ্যে এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, গোল্ডেন ডোমের বাজেট পেতে দুই থেকে চার বছর অপেক্ষা করতে হলে হুমকিগুলো মোকাবেলা করা খুব কঠিন।
গোল্ডেন ডোম এখনো ধারণার পর্যায়ে রয়েছে বলে এই সপ্তাহে আইন প্রণেতাদের বলেন বিমান বাহিনী সচিব ট্রয় মেইঙ্ক। প্রকল্পটি ‘স্টার ওয়ার্স’ প্রোগ্রাম নামে পরিচিত কৌশলগত প্রতিরক্ষা উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্থল ও মহাকাশে পাল্টা অস্ত্রের মাধ্যমে একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়। অস্ত্রব্যবস্থার মধ্যে লেজারও ছিল।
‘স্টার ওয়ার্স’ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। প্রকল্পটি খুবই ব্যয়বহুল ছিল। এত বড় অস্ত্রব্যবস্থা তৈরি সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে প্রকল্পটির সমালোচকরা বলে থাকেন। তখন মনে করা হত, এমন শক্তিশালী অস্ত্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে কোনো একটি পরাশক্তির পারমাণবিক হামলা পালটা পারমাণবিক হামলা ডেকে আনবে। এভাবে দুটি দেশই ধ্বংস হবে বলে আশঙ্কা করা হয়।