অদ্য ১৪ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিঃ “বিশ্ব মান দিবস” উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় 'Shared vision for a better world-Standard for SDGS' অর্থাৎ 'সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে-মান'।
বিএসটিআই,চট্টগ্রাম কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব মান দিবস- ২০২৫ অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রাব্বানী, উপপরিচালক ও অফিস প্রধান, বিশ্ব মান দিবসের তাৎপর্য ও বিএসটিআই'র কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, মান শুধু একটি বাণিজ্যিক ধারণা নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা এবং উন্নত জীবনের ভিত্তি। বিশ্ব মান দিবস, ২০২৫ এ বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে SDG লক্ষ্যমাত্র ১৭, অর্থাৎ “লক্ষ্য অর্জনে অংশীদারিত্ব” । শিল্প প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের দায়িত্ব হলো বিএসটিআই-এর মানদণ্ড মেনে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি ও আমদানি করা। অন্যদিকে ভোক্তা সাধারণের উচিত মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয় এবং এবিষয়ে সচেতন হওয়া; এভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে SDG 17 সহ সকল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব মর্মে আশা ব্যক্ত করেন। শিল্পায়ন ও রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিস সম্প্রসারণ, আধুনিকীকরণ ও নতুন ল্যাব স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষণ ও ক্যালিব্রেশন সেবা নিশ্চিত করছে। হালাল সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ওজন ও পরিমাপের সকল ক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি সম্প্রসারণ এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে বিএসটিআই অবদান রাখতে সচেষ্ট।
বিশ্ব মান দিবস- ২০২৫ অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র কৌশল বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক ডঃ আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তিনি স্ট্যান্ডার্ড এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। এছাড়াও প্রতিপাদ্য বিষয় 'Shared vision for a better world-Standard for SDGS' অর্থাৎ 'সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে-মান' এর উপর আগত অতিথিদের সম্যক ধারণা প্রদান করেন।
আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন ওজন ও পরিমাপ নিয়ে সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ সমস্যা আরও প্রকট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেট্রিক পদ্ধতি ব্যতীত ভিন্ন ভিন্ন এককে ওজন পরিমাপ করায় পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে শুধু বিভ্রান্তিরই সৃষ্টি হয় না বরং প্রতারণারও সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশে একজন সৎ ব্যবসায়ীকেই বরং সমস্যায় পড়তে হয় কারণ অসৎ পথে যারা চলে তারা নিয়ম ভাঙার সুযোগ সুবিধা নিয়ে ফেলে। তাই আমাদের ব্যবসা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য সকল ক্ষেত্রে Standardization আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন যে, Standardization ব্যতীত কোন ক্ষেত্রেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সক্রিয়তা ও কার্যক্রমের ফলে দেশে ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অনেক সমস্যাই সমাধান সম্ভব হয়েছে। তবে শুধু বিএসটিআই-এর প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয় আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল মনোভাবও জরুরি। তিনি সবাইকে নিজের জায়গা থেকে অন্যকে ওজনে কম না দেওয়ার এবং অন্যের কাছ থেকে পণ্য সঠিক পরিমাণে বুঝে নেওয়ার আহবান জানান। এই মানসিকতা যদি সবাই গ্রহণ করে, তাহলে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সবশেষে যারা এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন এবং দেশব্যাপী ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব মোঃ শরীফ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সবাই মিলে একটি better world গড়ে তোলার জন্য তিনি আহ্বান জানান। পরিবার হতে নীতি-নৈতিকতার চর্চা অনুশীলনের মাধ্যমে Standard behavior গড়ে তুলতে হবে এবং কারও জন্য অপেক্ষা না করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের মানসিকতা তৈরি করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সেবা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জনাব কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সাধারণ সম্পাদক, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রাম তাঁর বক্তব্যে মানব জাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য মান অনুসরণ করা আবশ্যক উল্লেখ করেন। তিনি স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত মত বিনিময় করে সমস্যা চিহ্ণিতকরণ ও সমাধানের জন্য বিএসটিআইকে অনুরোধ জানান। একই সাথে নবনির্মিত অত্যাধুনিক ভবনকে কাজে লাগিয়ে বিএসটিআই’র সেবা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করেন।
পরিশেষে জনাব মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, উপপরিচালক (রসায়ন) সভাপতির অনুমতিক্রমে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন
সম্পাদক : সৈয়দ মিজান সমরকন্দী
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত