জাহেদ আলম:-বাংলাদেশ–মায়ানমার সীমান্তঘেঁষা কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার মানুষের জীবন অনেক দিন ধরেই অনিশ্চয়তার মধ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে রামুতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র–সংক্রান্ত সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় সেই উদ্বেগ আরও গভীর হয়েছে সীমান্তবাসীর মধ্যে। জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের চা বাগান এলাকার এক দোকানি বলেন, “রাতে গাড়ি চলাচল দেখলেই ভয় লাগে। কী বহন করছে, কে যাচ্ছে—কিছুই জানা যায় না। পুলিশ অভিযান চালালে কিছুটা স্বস্তি পাই, কিন্তু আতঙ্ক পুরোপুরি যায় না।” তাঁর মতো অনেকেই বলছেন, সীমান্তঘেঁষা এই পথগুলোতে অচেনা গাড়ি ও মানুষের চলাচল এখন আর নতুন কিছু নয়। জীবিকা বনাম নিরাপত্তা নাইক্ষ্যংছড়ির অনেক মানুষ কৃষিকাজ, দিনমজুরি কিংবা সীমান্তঘেঁষা ছোট ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয়দের ভাষ্য, নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতি হলে কাজের সুযোগ কমে যায়। সন্ধ্যার পর অনেকেই বের হতে চান না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিত্যদিনের আয়। নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের এক দিনমজুর বলেন, “ভোরে কাজে বের হই, সন্ধ্যার আগেই ফিরতে চেষ্টা করি। রাস্তায় যদি হঠাৎ চেকপোস্ট বা গোলযোগ হয়, তখন পরিবারে দুশ্চিন্তা শুরু হয়।”শিশু ও নারীদের বাড়তি চাপ স্থানীয় নারী ও শিশুদের ওপরও এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে। অভিভাবকেরা জানান, সন্তানদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে। অনেক মা বলেন, রাতের বেলায় কোনো শব্দ হলেই শিশুদের ঘুম ভেঙে যায়। এক গৃহিণী বলেন, “বাচ্চারা এখন প্রশ্ন করে—গুলি হবে নাকি? কীভাবে বোঝাব, আমরা তো নিজেরাই ভয় পাই।”পুলিশি অভিযানে স্বস্তি, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশাসী মান্তবাসীরা পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে তাঁদের মতে, শুধু অভিযান নয়, দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে, এটা ভালো দিক। কিন্তু সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবন যেন স্বাভাবিক থাকে, সেই ব্যবস্থাটাও জরুরি।”ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কানি রাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রভাব শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনেই পড়ে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া দরকার।সীমান্তবাসীর প্রত্যাশা একটাই—তাঁদের এলাকা যেন আর কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের করিডর না হয়, বরং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা ফিরে পাক।
সম্পাদক : সৈয়দ মিজান সমরকন্দী
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত